3 July 2015

A bit of Neverland maybe

I had written the following in longhand a decade ago, at 29, one sudden evening. I could never quite find the right ending for the story though. I've been typing the below in tiny bits for almost two years now. I thought I'd write something different today. But this came out of the file and started hounding me. So I finished typing it. I'm putting it up. At least then maybe it'll stop chasing me around. I don't know whether anyone will like it but I do hope nobody who reads it dislikes it...Here goes -

বারো বছর বয়েসে আমি সেই ডাকাতকে দেখেছিলাম।

আমি  তখন আমাদের সেই ছোট সহরে ঘুরে বেড়াতাম। মাঝে মধ্যে হারিয়ে  যেতাম। সেই ভাবেই অনেক নতুন রাস্তা খুঁজেও পেয়েছিলাম। মনের মতন সমবয়েসী সঙ্গী সাথী ছিল না আমার।  মা বাবা ছিল না। দাদা, দিদি, ভাই, বোন ছিল না। দাদু দিদা ছিলেন তবে। 

ইস্কুলে যেতাম আর বাড়িতে দাদু দিদার কাছে থাকতাম। তাঁরা আমায় বন্ধিহীন গরুর মতন ছেড়ে দিতেন।  যেখানে মন যেতে চাইত  - সেখানে  যেতাম। ওন্য  মেয়েদের মা বাবার মতন আমাকে ঘরে বন্ধ করে রাখতেন না।   তাই আমিও লাগাম  ছাড়া গরুর মতন ছুটির দিনে সারাদিন চরে বেড়াতাম। আর নইলে ইস্কুল থেকে ফিরেই, ব্যাগ রেখে, কোনমতে খেয়ে বেরিয়ে পরতাম। আমার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা আমার দাদু দিদাকে নানা রকমের কথা শোনাতো, "কি বেয়াদব মেয়ে তৈরী করেছেন আপনারা! একটু তো দেখবেন! একটু তো খেয়াল রাখবেন। কি সব  করে বেড়ায় ছাগল মেয়েটা। ঝোপে জঙ্গলে পুকুরের  মধ্যে পর্যন্ত - যেখানে খুশি চলে যায় ! কুকুর ছানা, ছাগল ছানা, বাছুরের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। গতকাল  দেখলাম দুটো মোষের সঙ্গে কথা বলছে! ছি-ছি।...বাপ মা নেই। তাই এই অবস্থা।" আমার খুব  রাগ হত। তবে দাদু দিদা তাদের কথায় কান দিতেন না। আমার শুধু নিয়ম ছিল সন্ধ্যের আগে ঘরে ফিরে আসা। দাদু হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতেন, "রাগ করছিস কেন, মা? যে যা বলছে বলতে দে । তাতে তোর কি? তোর যা করার তুই কর না। লোকে তোকে ছাগল বললেই তো তুই ছাগল হয়ে যাস নি এখনো। পরের টা পরে দেখা  যাবে।" দাদু একটু সময় নিয়ে গভীর যেন কিছু চিন্তা করে বলতেন, "আর ছাগল হলেও তো তোর  দিদা  আর আমি তোকে ঘরে বন্ধ করে রাখব না।" আমি সেই কথায় প্রায় হেসে ফেলতাম কিন্তু বলে উঠতাম "আমায় ছাগল বলেছে বলে রাগ হয়নি দাদু। অমন কথা বলল তবে!" "তাতে দাদু বলতেন, "জানি জানি। সে বলুক গে।  আমিও ওই বিরাট-পেট মহারানী -কে বলে দিয়েছি যা বলার।" তাতে আমি  হেসেই ফেলতাম।  

দাদু আমায় মাঝে মাঝে বলতেন, "ওন্য লোকেদের কথায় কোনদিন কিছুতে মা ভয় পাবি না।" দাদুকে জড়িয়ে ধরে আমি একবার বলেছিলাম, "বাঘ দেখলেও ভয় পাব না, দাদু?" দাদু  তাতে হেসে বললেন, "বাঘ দেখলেও নয়।  বাঘ তখন তোর্ সামনে। তখন ভয় পেয়ে হাতি ঘোরা কি করবি ?" দাদুর কথা বুঝি নি তখন । তবে বেশি কথা বলা আমার বদ অভ্যেস ছিল।  তাই চুপ করে না থেকে বলে উঠেছিলাম,"না দাদু, বাঘ দেখেও ভয় পাব না। শুধু দিদার ভান্ডারে ঢুকে আচার  চুরি করতে ভয় হয়।" দিদা সেটা শুনে হেসে আমার কপালে একটা হামি দিয়ে বলেছিলেন, "যে যাই বলুক, এই ছাগল মেয়েটি আমাদের মন্দ নয়।"


পড়াশোনা করতাম মোটামোটি। আর যখন তখন মনের জানালা খুলে সুন্দর সুন্দর নিত্য নতুন জায়াগায় ঘুরে বেড়াতাম। আঁকতুম  খানিকটা। গল্প বই পড়তাম। দাদু আমায় কত গল্প বলতেন।  সেগুলো শুনতাম। ঘুমানোর  সময় জেগে জেগে সেই গল্প থেকে রঙ্গীন স্বপ্নের জ্বাল বুনতাম । কখন ঘুমিয়ে পরতাম তাও জানতাম না। আমাদের সেই শহরের পাশেই এক জঙ্গল ছিল।  সেই জঙ্গল নিয়েও কত স্বপ্ন দেখতাম।  সেই স্বপ্নর গল্প বলতে গেলে আর এই গল্প শেষ হবে না।  


বারো বছরের জন্মদিনে, আমাকে দাদু দিদা একটা রুপো রঙের সাইকেল কিনে দিলেন। তারপর আর কে দেখে আমায়। সেই সাইকেল করে কাছে দূরে কোথায় না যায়নি।  বেরনোর আগে দাদু শুধু বলতেন, "সাবধানে ফিরিস, মা।" আর দিদা বলতেন, "দূর্গা, দূর্গা। " 


সেইরকম একটি দিনে, সেই জঙ্গলে, সেই ডাকাতের সঙ্গে আমার দেখা হলো। বসে ছিল সে।  একা।  তারও কেউ ছিল না সঙ্গে। সঙ্গী সাথী বিহীন সে বসে ছিল একা ।  কি করে চিনলাম তাকে জানি না। গাছের পেছন থেকে দেখলাম তাকে প্রথমে। সে তাকিয়ে ছিল, জঙ্গলের শেষ সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দুরে গোধূলি রাঙ্গা আকাশের দিকে। সন্ধ্যে তখন নামে নি ।  কিন্তূ  যেন  সে কোথায় তার সন্ধ্যা তারা দেকছিলো এক মনে, বা খুঁজছিল তাকেই । কে জানে।  ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি নিয়ে। আর আমি  দেখছিলাম তাকেই এক মনে। কি করে বলি - যেন সেই দাকাত্কেই খুঁজছিলাম কত জন্ম জন্মান্তর ধরে। সেই যেন আমার কতো কালের প্রাণের বন্ধু।  কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিলাম আমি জানি না।  সে দেখে নি  আমায়। দেখতে পায় নি সে। দেখবেই বা কি  করে। আমি তো একটা বট গাছের ফাঁক থেকে ঘার বেঁকিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম এক দৃষ্টিতে। সে তো তাকিয়ে ছিল আকাশ কোলে, তার সন্ধ্যা  তারার খোঁজে। সেই মুহুর্তে যেন হারিয়ে গেলাম - সত্যি কিছু না বুঝে হারিয়ে গেলাম। তারপর ধীরে ধীরে মনে হলো আমার সেই ছাগলের মতন কানগুলো কেউ যেন আগুনের জলে ডুবিয়ে দিয়েছে। একটা শব্দ না করে চুপিচুপি বেরিয়ে পরলাম সেই জঙ্গল থেকে। এতো বোকা হয়ে গেলাম যে জঙ্গল থেকে বেরিয়েও সাইকেলটাকে টানতে টানতে ঠেলতে ঠেলতে  নিয়ে চললাম রাস্তাতে।  কখন যেন  আকাশ কালো করে মেঘ ছুটে এলো সারিসারি।  কি যে ঝড় নামল ঠিক দোরগোড়ায় পৌঁছতেই, কি বলি।  আমি হাঁ করে আকাশের তরে তাকিয়ে খানিকটা ভিজলাম। দিদা দেখেই বললেন, "এই যে ফিরেছিস ঠিক ঝড়ের সাথে!" দাদু বললেন, "আমি তো আজ ব্যস্ত হয়ে তোকে খুঁজতে বেরিয়ে পরছিলাম। ভাগ্যিস হারিয়ে যাস নি ঝড়ের মধ্যে।" আমি  বলে উঠলাম, "হারিয়ে গেছি দাদু! সত্যি হারিয়ে গেছি! আর ফিরি কি করে?" দিদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "সে কি কথা রে? হারিয়ে গেছিস কোথায় আবার? এই তো আমরা। এই তো তুই..." ফিরে এলাম তখন।  পুরোপুরি না হলেও -  ফিরে এলাম বটে।  এক গাল হেসে  বললাম, "না না দিদা। কি সব .বলে ফেললাম।  হারিয়ে আবার যাব কোথায়..?" দিদা বললেন, "তাই বল।  আমি আবার ভাবলাম...যাক গে সে কথা।  যা তুই গিয়ে হাত  মুখ ধুয়ে, জামা কাপড় পাল্টিয়ে, একটু পড়তে.বস দেখি।  আর জল খাবার কি খাবি - নিয়ে নে নিজে।"


আমি চলে গেলাম নিজের ঘরে।  কিন্তু পড়াশোনা আর হলো না সেদিন। আঁকার খাতাটা বের করে একটা ছবি আঁকলাম ।  সেই আমার ডাকাতের ছবি। 


কত  বছর কেটে গেছে। দাদু দিদা আর এই পৃথিবীতে নেই। কিন্তু আমার মনে রয়েছেন এখনো। কত  ঘুরেছি। কত দেশ বিদেশ দেখেছি, কত পড়েছি, নতুন জিনিস শিখেছি, কত এঁকেছি, কত আঁকা বিক্রিও করেছি, কত বাচ্চাদের আঁকা শিখিয়েছি । তবে সেই ডাকাতের ছবি কাউকে দেখায় নি। আমার কাছে এখনো রয়েছে সে ছবি। কত গল্প করেছি সেই ডাকাতের সঙ্গে...। আপনি হয়ত ভাববেন "সে আবার কি? এ তো পাগলের মতন কথা।" তা হবে হয়ত। আমি অত সব জানি না। হয়ত বা সেই ডাকাত তার সন্ধ্যা তারা খুঁজে পেয়েছে। সেও হতে পারে। সেই ডাকাতের সঙ্গে কোথাও না কোথাও হয়ত বা আবার দেখা হবে। সেও হতে পারে। আর দেখা হলে তো সেও হয়ত বা মাঝে মধ্যে জড়িয়ে ধরে তার মনের কথা বলতে পারে, কিছু গল্প বলতে পারে, ঝগড়াও করতে পারে...সঠিক জানি না অবশ্য। হতেও তো পারে। 

No comments: